সুদ সম্পর্কে ইসলাম আমাদের কি বলে
ভুমিকাঃ রিবা ( আভিধানিক অর্থঃ বৃদ্ধি, আধিক্য ,পরিবর্ধন, ইত্যাদি) যা উসুরি হিসেবেও পরিচিত, তা হলো একটি আরবি শব্দ,যা ইসলামী পরিভাষায় সুদকে বোঝায় । ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক লেনদেনের ক্ষেত্রে চুক্তির শর্তানুযায়ী শরীয়ত সম্মত কোন প্রকার বিনিময় ব্যতীত মূলধনের উপর অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয় তাহাই সুদ। মহান আল্লাহ তা'আলা ইসলামে ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।
যেমন আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারীমে এরশাদ করেনঃ আমি তোমাদের জন্য ব্যবসাকে হালাল করেছি এবং সুদকে হারাম করেছি অতএব তোমরা সুদের ধারের কাছেও যাবে না।এছাড়াও হাদিস শরীফের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সুদ গ্রহণকারী প্রদানকারী ও সুদেশাক্ষের প্রতি অভিশাপ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অভিশাপে তারা সবাই সমান। ( মিশকাত মুসলিম)
নিম্নে সুদ সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করা হলোঃ
- ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই সুদ এমন বস্তু যার পরিণাম হচ্ছে সংকুচিত হওয়া যদিও তা বৃদ্ধি মনে হয়’ (ইবনে মাজাহ মিশকাত হা/ ২৮২৭)
- আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিতঃ রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা ) সুদ গ্রহণকারী সুদ প্রদানকারীর ওপর অভিশাপ করেছেন। ( ইবনে মাজাহ, সনদ সহিহ, মিশকাত হা/ ৩৭৫৩)
- আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ রাসুল (সাঃ) বলেছেন , সুদের পাপের ৭০ টি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হচ্ছে মাতাকে বিবাহ করা। ( ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/ ২৮২৬
- আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে ব্যক্তি কারো জন্য সুপারিশ করলো এবং সেই সুপারিশের প্রতিদান স্বরূপ তাকে কিছু উপহার দিল। যদি সে তা গ্রহণ করে তাহলে সে সুদের দরজা সমূহের একটি বড় দরজায় উপস্থিত হল।( আবু দাউদ ,সনদ হাসান ,মিশকাত হা/৩৭৫৭)
সুদখোরের ছয়টি ভয়াবহ গুনাহ বর্ণনা করা হলোঃ
- কেউ যখন সুদ খেলো সে যেনো আল্লাহর ফরয বিধান লংঘন করলো।
- কেউ যখন সুদ খেলো সে যেনো সয়ং আল্লাহর রাসুল এর সাথে যুদ্ধের ঘোষনা দিলো।
- কেউ যখন সুদ খেলো সে যেনো তার এক মুসলমান ভাইয়ের হক মেরে খেলো। কেউ যখন সুদ খেলো সে যেনো তার এক মুসলমান ভাইয়ের উপর জুলুম করলো।
- কেউ যখন সুদ খেলো সে যেনো তার আপন মায়ের সাথে যেনা করলো।
- কোনো মুসলমান যখন সুদ খায় তখন তার কোনো ইবাদত আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না।
সুদখোরের দশটি ভয়াবহ শাস্তি বর্ণনা করা হলোঃ
- কেউ যদি সুদ খায় সে যেনো আল্লাহর সাথে যুদ্ধের ঘোষনা দেয়।
- সুদের কারবার কারি, আল্লাহ র পক্ষ থেকে অভি সপ্ত, তার উপর আল্লাহর অভিসাপ নাযিল হয়
- সুদের কারবার কারি ইয়াহুদিদের সাথে সাদৃশ্য গহন কারি
- সুদের কারবার কারি জাহেলি যুগের কালচার এর ধারক বাহক হাদিসে এটাইসপসটো।
- সুদের কারবার কারি কে আল্লাহ মৃত্যুর পরের কিয়ামতের শাস্তি তো দূরের কথা তাকে বারযাখি জীবন মৃত্যুর পরেই রক্তের নহরে ভাষিয়ে দেওয়া হবে।
- সুদের কারবার কারি কে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন পাগলের ন্যায় অর্থাৎ জীনে ধরলে মানুষ যেরকম হয় এরকম ভাবে উুঠাবেন।
- সুদের কারবার কারি কে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই ধংস করে দিবেন, এমন ভাবে ধংস করবেন যে মানুষ বুঝতেও পারবে না।
- সুদের কারবার কারি কে আল্লাহ তায়ালা, ৭ টি ধংসাতোক কারবার এর মধ্য দিয়ে মৃত্যু দিবেন
- সুদের কারবার কারি কে আল্লাহ তায়ালা মায়ের সাথে যেনা করলে যেই গোনাহ হয় এই গোনাহের শাস্তি দিবেন
- আর সুদের কারবার কারি কে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই আরো অনেক নগদ শাস্তি দিবেন। যেগুলা মানুষ দেখতেই পাবে।
সর্বশেষ কথাঃ
কোরআন এবং হাদিস দ্বারা পুরোপুরি প্রমাণিত হয় যে সুদ একজন মুসলমানের জন্য হারাম ।
সুতরাং একজন মুসলিমের উচিত যে সে যেন সুদ থেকে বিরত থাকে। আর কোরআনে আল্লাহ আল্লাহ তাআলা অনেক বিষয় হারাম করেছেন কিন্তু সুদকে আল্লাহ তাআলা সরাসরি হারাম ঘোষণা করেছেন।
আর আমাদের জানা উচিত যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমায়ছেন যে’ আল্লাহ তায়ালা নিজে পবিত্র এ জন্য তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কোন মাল গ্রহণ করেন না।এখন আপনি যদি আল্লাহর রাস্তায় অনেক টাকা দান করেন কিন্তু আপনার টাকার মধ্যে সুদের টাকা রয়েছে আপনার কোন দান আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন না।
কারণ আপনার মাল হারাম।আপনি যদি সুদ খান এরপর যদি নামাজ পড়েন, রোজা রাখ কিংবা হজ করেন, আপনার কোন এবাদতই আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন না।সর্বোপরি কথা হলো একজন মুসলমানের সুদের মতন জঘন্য কারি কারবার থেকে দূরে থাকা।আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকেই হারাম ইনকাম থেকে এবং সুদ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুক আমিন।
ব্লগার জাফর সাহেবের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url