অধিক রাত জাগলে আমাদের যেই যেই ক্ষতিগুলা হয়
রাত জাগা সম্পর্কে ইসলামিক কিছু বর্ণনাঃ
এক ব্যক্তি হযরত ইব্রাহিম ইবনে আদহাম রহিমাহুল্লাহ এর সাথে তর্ক করছিল যে ,বরকত বলতে কিছুই নেই। তিনি বললেন তুমি কি ছাগল ও কুকুর দেখেছো লোকটি বলল যে দেখেছি। শায়েখ লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন , আচ্ছা বলতো কুকুর আর ছাগলের মধ্যে কে বেশি বাচ্চা দেয়? লোকটি বলল কুকুর দেয়। শায়েখ বললেন এদের মধ্যে তুমি কোন জন্তুটিকে বেশি দেখতে পাও কুকুর নাকি ছাগল? লোকটি বলল ছাগলকে তো বেশি দেখা যায়।
শায়খ ইব্রাহিম ইবনে আদহাম রহিমাহুল্লাহ বললেন ছাগলকে যবে করা হয় এর পরেও ছাগলের সংখ্যায় বেশি দেখা যায়। শাইখ ইব্রাহিম আদহাম বললেন যে ছাগলকে এত বেশি জবে করা হয় এরপরেও ছাগলের সংখ্যা বেশি এটাকে বরকত নয়? এর কারণ কি? ছাগলের মধ্যে বরকত হয় আর কুকুরের মধ্যে কি বরকত হয় না এজন্যই কি এর সংখ্যার তারতম্য শায়েখ বললেন দেখো ছাগল সন্ধ্যা হতেই ঘুমিয়ে যায় আর ভরে জাগ্রত হয়। এই সময়টাই হয় রহমত ও বরকতের মুহূর্ত। হলে তার মধ্যে বরকত হয়।
আর কুকুর সারারাত জাগ্রত এবং ফজরের আগে ঘুমায় তাই সে বরকত থেকে বঞ্চিত হয়। মানুষের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম এর জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময় হলো রাত। কেননা আল্লাহ তা'আলা রাতকে বিশ্রামের উপযোগী করে বানিয়েছেন মহান আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি তোমাদের জন্য রাত্রিকে আবরণ স্বরূপ আর দিনকে বানিয়েছি। তোমাদের কাজের জন্য (সূরাঃ নাবা, আয়াতঃ৯-১১)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত হল- এশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে যাওয়া শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ পড়া, কেননা আল্লাহ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে প্রথম আসমানে নেমে আসে বান্দাদের দোয়া করার জন্য ক্ষমা চাওয়ার জন্য ডাকে, আর আমরা? সারারাত মোবাইলে, ইন্টারনেটে হারাম কাজে ব্যস্ত থেকে ঠিক এই সময়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আর ফজরের তো খবর নেই।
অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফজরের কেবল ২ রাকাত সুন্নত সালাত পৃথিবী এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে এর সব কিছুর চাইতে উত্তম সুবহানাল্লাহ। তাহলে ২ রাকাত ফরজের কতটা মর্যাদা হতে পারে? এমন মহামূল্যবান সময় আমরা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেই। রাসুল (সাঃ) আরো বলেন যে ভোর বেলায় কাজের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন হযরত শহর গামেদঃ)(রা:) সূত্রে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) এ দোয়া করেছেন হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু কে বরকতময় করুন এজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। বর্ণনাকারী বলেন, হযরত সকর (রাঃ) ও তার ব্যবসায়ী কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তার ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয়। তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ কর। (আবু দাউদ হাদিসঃ২৬০৬)
রাত জাগা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্যঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণা বিভাগ ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সী ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের তথ্য মতে যখন সূর্যের আলো থাকে না তখন শরীরকে কাজ করতে বাধ্য করা বা জাগিয়ে রাখা শরীরে ম্যারাটনিক হরমোন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। আর এই মেলাটোনি মানুষের দেহে টিউমারের বৃদ্ধিকে রোধ করে। ফলে তাদের ধারণা রাত জাগা মানুষদের ক্যান্সার হওয়ায় ঝুঁকি বেশি।
অর্থাৎ রাতের ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এটি কোনভাবেই দিনের বেলায় ঘুমিয়ে পুষিয়ে নেওয়া যায় না তাই রাতের বেলা গল্পগুজব সিনেমা ফেসবুকিং সহ সব অহেতুক কাজ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। কারণ রাতে অহেতুক দেরি করে ঘুমানো মানুষকে শেষ রাতের এবাদত ও ফজর নামাজ থেকে যেমন বঞ্চিত করে তেমনি এটি স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই শুভ কর নয়। যুক্তরাজ্যের একদল গবেষকের মতে যারা দেরিতে ঘুমায় ও দেরিতে ঘুম থেকে উঠে তাদের অকাল মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যাই।
যুক্তরাজ্যের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রিরেন্স লেভি বলেন, রাত জাগার বদ অভ্যাস যারা গড়ে তুলেছ্ তাদের ৯০ শতাংশই মানসিক রোগের শিকার ৩০ শতাংশে থাকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এছাড়া ইস্ময়বিক সমস্যা থেকে শুরু করে তন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। যুক্তরাজ্যের সুবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রোনোলজি বিভাগের অধ্যাপক জন রিচার্ড সন বলেন, আমরা দেখেছি যারা দেরি করে ঘুম থেকে উঠে তারা নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক জটিলতায় ভোগে তাদের গড় আয়ু নিয়মিত সকালে ওঠা মানুষের চেয়ে সাড়ে ছয় বছর কম খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার সম্পদ ও জ্ঞানের জন্য পূর্ব শর্ত। বলা যায় সফলতার চাবিকাঠি। কেননা ভোররাতে বা দিনের শুরুতে সবচেয়ে বেশি কল্যাণ থাকে। শুধু এবাদতই নয় দুনিয়াবী কাজের জন্য ও এটি সবচেয়ে উপযুক্ত ও বরকত সময়।
তাছাড়া এ সময় বান্দার রিযিক বন্টন হয়। যারা তখন ঘুমিয়ে থাকে তারা সফলতা ও রিজিকের বরকত থেকে বঞ্চিত হয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেন সকালবেলায় রিজিকের অন্বেষণ কর কেননা সকাল বেলা বরকতময় ও সফলতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত সময় । (মাজ্জমামা ও জাওয়ায়েদ হাদিসঃ৬২২০)
রাত জাগলে যে ১৮ টি বড় বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়ঃ
- ক্ষুধা বেড়ে যায় এবং আপনি বেশি খেতে শুরু করেন। যার পরিণতি হচ্ছে অবেসিটি বা স্থূলতা।
- স্ট্রোক করার ঝুঁকি চার গুণ বেড়ে যায় এছাড়াও অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
- টাইপ 2 ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়
- মস্তিষ্কের টিস্যু নষ্ট হওয়া শুরু হয়।
- ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে।
- এসিডিটি যেটা পরবর্তীতে পাকস্থলীতে আলসারের রূপ নেয়।
- কর্মের ধারাবাহিকতা বিপর্যস্ত হয় এবং কর্মত অঞ্চলতা হ্রাস পায়।
- কোন ব্যাপারে অন্য মনোযোগ দেওয়াটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে যায়।
- সারাদিন একটা ক্লান্তি অনুভূতি হয়।
- গ্যামেট কম তৈরি হয় ফলে প্রোডাকশন সিস্টেমের ফার্টিলিটি কমে যায়।
- উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়।
- চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে যায়।
- ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে এবং ত্বকের রং নষ্ট হয়ে যায়।
- চামড়া দ্রুত কুঁচকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
- ছারপেনিয়া হবার প্রবণতাও বেশি দেখা যায় ছারকোপিনেয়া হলো এমন এক জটিলতা যাতে রোগী ধীরে ধীরে পেশী হারাতে থাকেন।
- নারীদের মাঝে মেদ বহুল পেট এবং মেটাবলিক সেন্ট্রোম হতে দেখা যায় বেশি।
- স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের মতো ক্যান্সারেরমতো কোষদেহে গঠন হয়ে থাকে অতিরিক্ত রাত জাগার কারণ।
সর্বশেষ কথাঃ
অনেকদিন তারুণ্য ধরে রাখতে ঘুমের কোন বিকল্প নেই নিয়ম মেনে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমালে শারীরিক এবং মানসিকভাবে খুব সহজেই সুস্থ থাকা যায়। অতএব আমাদের পরিমাণ মতো ঘুম খুবই প্রয়োজন এজন্য আমাদেরকে পরিমাণমতো ঘুমাতে হবে এবং খাওয়া-দাওয়া করতে হবে।
ব্লগার জাফর সাহেবের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url