কাঁচা সরিষার তেল খেলে কি হয় বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক মন্ডলী আজকে আমরা আলোচনা করব কাঁচা সরিষার তেল খেলে কি হয় এ সকল বিষয় সম্পর্কে। এবং কাঁচা সরিষার তেল খেলে কি হয় এর পাশাপাশি আরো জানবো রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা কী এ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে। তো চলুন দেরি না করে নিম্ন জেনে নেওয়া যাক।
তো কাঁচা সরিষার তেল খেলে কি হয় এবং এর পাশাপাশি রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা কি এবং সরিষার তেলের কিছু ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে হলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি সম্পূর্ণটা মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।
ভূমিকা:কাচা সরিষার তেল খেলে কি হয়
কাচা সরিষার তেলের খেয়ে নিতে সামান্য বা অল্প ধরনের জ্বালানো স্বাস্থ্যগত উপকার হতে পারে। এটি মুখের জ্বালানো, গলা দুখে হওয়া, অতিসারা, এবং এলার্জি রোগে সাহায্য করতে পারে। সরিষার তেলে অনেক প্রকার এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা মুক্ত রেডিক্যাল সংক্রমণ নিয়ে কাজ করে এবং এটি অস্থিরতা ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, কাচা সরিষার তেলের ব্যবহারের কিছু সাইড ইফেক্টও থাকতে পারে, যেমন ত্বকের সমস্যা বা পাচন সমস্যা হতে পারে। তাই এর ব্যবহারে মাত্রা সঠিকভাবে মেয়াদ মেনে চলা উচিত।
সতর্কতাঃ আপনি যদি কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসম্পর্কিত সমস্যা বা এলার্জি অনুভব করেন বা নির্দেশিত মেডিকেশন নিচ্ছেন, তবে আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে ভুলবার নেই।
রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা
রান্নাই সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক। রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নয়, চলুন আজকে জানা যাক রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা কি কি সরিষার তেল বিভিন্ন ভর্তা তৈরিতে এবং বিভিন্ন সুস্বাদু রান্নায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে । সুগন্ধ এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই যেমন এক দিকে রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করে ঠিক তেমনি অন্যদিকে রান্নার গুণগতমান বজায় রাখে।
বর্তমানে মানুষ রান্নার কাজে সয়াবিন তেল ব্যবহার করে তারা ভুলে গেছে যে খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা আসলে কতটা। কিন্তু একসময় এই সরিষার তেলে সবচেয়ে বেশি রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো, বাজারে সয়াবিন তেল আসার পরে বেশিরভাগ মানুষই খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা ভুলে গেছে। শরীরের সঠিক বৃদ্ধির জন্য খাঁটি সরিষার তেলের স্বাস্থ্যকর অনেক সহায়তা করে।
তাই সকল আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা রান্নায় খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহার করতে বলেন। প্রাচীনকাল থেকেই রান্নাই সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। রান্নাকে সুস্বাদু ও পুষ্টিগন বজায় রাখতে আগে থেকেই ঘানি ভাঙ্গা খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহার করা হতো। রান্নায় সরষের তেল ব্যবহার করার ফলে হৃদরোগ জনিত জটিলতা সহ আরো অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সরিষার তেলে থাকে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং এর সাথে হৃদরোগের ও ঝুকি কমায়। রান্নার তেলে ভেজাল থাকলে হজমের সমস্যা পেটের ব্যথা সহ কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগে পর্যন্ত ভোগা সম্ভাবনা রয়েছে।
সকল ভোজ্য তেলের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে সরিষার তেলে ৭৫ শতাংশ রোগ প্রতিরোধ করে এবং এর সাথে হৃদরোগ ,কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। খাঁটি সরিষার তেলে এত বেশি পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ও পলিস্যাচুরেটেড থাকে যে বদহজম ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্যেও অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্যকর।
রসুন ও সরিষার তেলের উপকারিতার
রসুন ও সরিষার তেল একই সাথে বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করলে বা রান্না করে খেলে শরীরে সকল রোগ নিরাময় তো হবেই সাথে সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। রসুন এবং সরিষার তেল একসাথে ব্যবহারের ফলে কার্ডিওপ্রটেক্টিভ, ইমিউনিটি বুস্টার এবং শরীরের লোহিত কণিকাকে শক্তিশালী করবে।
আমাদের শরীর অসুস্থ হলে যদি মেসমেস করে বা ব্যথা করে অথবা কোথাও পড়ে গিয়ে যদি শরীরে আঘাত লাগে তাহলে সেখানে যদি রসুন এবং সরিষার তেল একসাথে গরম করে মাসাজ করে দেওয়া হয় তাহলে অতি দ্রুত ব্যাথা সেরে যাবে। এছাড়াও বাতের ব্যথায় রসুন এবং সরিষার তেল ব্যবহার করলে এটার থেকে সাময়িক ভাবে মুক্তি পাওয়া যায়।
রসুন এবং সরিষার তেলের তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। সরিষার তেল এবং রসুন একসাথে গরম করে বুকে মালিশ করা হয় তাহলে বুকে জমে থাকা অনেক দিনের কফ বা কাশি উঠে যাতে সহায়তা করে। রসুন এবং সরিষার তেল দিয়ে ঘরোয়া ভাবে অনেক রোগ প্রতিকার করা সম্ভব।
রসুনের ভিটামিন ই, ভিটামিন সি ও সালফার এবং সরিষার তেলে ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই ,ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৫ থাকায় শরীরের অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বৃদ্ধি করে। তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শরীর সুস্থ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধির জন্য আমাদের প্রতিদিন রসুন ও সয়াবিন তেল খাওয়া অথবা ব্যবহার করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক
প্রত্যেকটা জিনিসের উপকারি দিক থাকার পাশাপাশি ক্ষতিকর দিক ও থাকে। যেমনঃ
- সরিষার তেলে অনেক পরিমাণ এরিউসিক এসিড বিদ্যমান, যা শরীরের ইউরিক এসিডের পরিমাণও বৃদ্ধি করতে পারে।
- শরীরে ইউরিক এসিডের অতিরিক্ত বৃদ্ধি গাউট এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার মতো কঠিনতার রোগ ও সৃষ্টি করতে পারে।
- আবার অনেক সময় সরিষার তেল হার্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে যেমন সরিষার তেলের এরিউরিক এসিড অনেক সময় ট্রাই গ্লিসারাইড এর মাত্রা বাড়াতে পারে।
- যার ফলে হার্টের রোগের সমস্যা হতে পারে। সরিষার তেল অনেক সময় ত্বকের জন্য এলার্জির প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। অনেক সময় সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে চোখের জ্বালা পোড়া ও সৃষ্টি হয়ে থাকে।
আবার কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে সরিষার তেল ফুসফুসে ক্যান্সার রোগীদের শরীরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। প্রত্যেকটা জিনিসের একটি সুনির্দিষ্ট মাত্রা বা নীতি আছে। তাই আমাদের জীবনে যখন যেটা ব্যবহার করব তার ভালো খারাপ দুই দিকটা দেখেই ব্যবহার করতে হবে।
সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম
সরিষার তেল খাওয়ার উপকারিতা অনেক আমরা যদি নিয়ম করি সরিষার তেল খাই তাহলে আমরা শরীরের অনেক উপকার হবে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সরিষার তেল আমরা রান্না করে খাইতে পারি। সরিষার তেল দিয়ে ভর্তা খাওয়া আমাদের কাছে অনেক প্রিয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরিষার তেল প্রতিটি রান্নায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রান্নার গুণগতমান ঠিক থাকে। প্রতিদিন বিভিন্ন ভর্তার সাথে সরিষার তেল খেয়ে নিয়মিত উপকার পাওয়া যেতে পারে।
শীতের সময় নিজের শরীরে সুস্থতা বজায় রাখার জন্য গোসলের আগে করে এক ফোটা তেল নাভিতে এবং গোসলের পরে বুকে এবং পুরো শরীরে সরিষার তেল মেসেজ করে দিতে হবে। সরিষার তেল ব্যবহার করলে ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেল নিয়ম করে খাওয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রতিদিনের রান্নার তালিকায় সরিষার তেল প্রধান হিসেবে রাখা যেতে পারে। ঘানিভাঙ্গা সরিষার তেল রান্নাই ব্যবহার করলে এর গুণগত মান বাড়ার পাশাপাশি রান্নাটি সুস্বাদু ও অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হয় ।তাই আমরা সরিষার তেল রান্নায় ভর্তা ,ভাজি করা বিরিয়ানি রান্না ও তরকারি রান্না সহ সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি।
কাচা সরিষার তেল খেলে কি হয় :শেষ কথা
প্রিয় পাঠক মন্ডলী আশা করছি আমাদের আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা জানতে পারলেন কাঁচা সরিষার তেল খেলে কি হয় এবং এর পাশাপাশি রান্নাই সৈসার তেল ব্যবহার করলে কি কি উপকারিতা আপনারা পেতে পারেন এবং সরিষার তেলের কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে কিনা এ সকল বিষয় সম্পর্কে আশা করছি বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। সুতরাং আমাদের আজকের এই পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে অবশ্যই সেটি কমেন্টের মন্তব্য করে জানিয়ে দিবেন। এবং এই পোস্টটি আপনারা অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন যেন তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ
ব্লগার জাফর সাহেবের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url