খতিয়ান অনুসন্ধান - খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান

প্রিয় পাঠক মন্ডলী আজকে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক এর উপর আলোচনা করব আশা করছি টাইটেল দেখে জানতে পেরেছেন। বিষয়ে আলোচনা করব সেটি হচ্ছে খতিয়ান অনুসন্ধান সম্পর্কে।
খতিয়ান অনুসন্ধান - খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান
বর্তমানে আমাদের জীবনে জমি জমা নিয়ে প্রায় সকলেরই অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব লেগে থাকে। বা কাগজ পাতির মধ্যে অনেক ঝামেলা থেকে থাকে। তো আজকে খতিয়ান অনুসন্ধান কিভাবে করবেন এই সকল বিষয় সম্পর্কেই আলোচনা করা হবে।

আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান

আর এস খতিয়ান হলো জমির মালিকানা সংক্রান্ত একটি বিশেষ নথি, যা মূলত খাস জমির রেকর্ড রাখার জন্য প্রস্তুত করা হয়। এখানে কৃষি এবং অকৃষি উভয় ধরনের খাস জমির তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর এস খতিয়ানের পূর্ণরূপ হলো 'রাইটস সেটেলমেন্ট খতিয়ান'। এটি নির্দিষ্ট মৌজার সকল জমির মালিকানার তথ্য সংরক্ষণের একটি আনুষ্ঠানিক দলিল, যা আর এস পর্চা নামেও পরিচিত।
আর এস খতিয়ান অনুসন্ধানের জন্য নাগরিকদের dlrms.land.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে এবং 'সার্ভে খতিয়ান' অপশন নির্বাচন করতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে জমির মালিকের নাম এবং অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধান করা যাবে। এরপর ৫০ টাকা ফি পরিশোধের মাধ্যমে খতিয়ানের সার্টিফিকেট কপি সংগ্রহ করা সম্ভব।
অনলাইন থেকে আর এস খতিয়ান অনুসন্ধানের ধাপসমূহ:
  1. প্রথমে ভিজিট করুন dlrms.land.gov.bd অথবা **www.land.gov.bd**।
  2. 'স্মার্ট ভূমি রেকর্ড ও ম্যাপ' বিভাগে প্রবেশ করুন।
  3. 'সার্ভে খতিয়ান' অপশন নির্বাচন করুন।
  4. নিম্নোক্ত তথ্যগুলো প্রদান করুন:
  • বিভাগ নির্বাচন
  • জেলা নির্বাচন
  • উপজেলা নির্বাচন
  • খতিয়ানের ধরন (আর এস নির্বাচন করতে হবে)
  • মৌজা বা জে এল নং
  • সঠিক খতিয়ান নম্বর (যদি জানা থাকে)
  • যদি খতিয়ান নম্বর জানা না থাকে, তবে দাগ নম্বর বা জমির মালিকের নাম দিয়ে অনুসন্ধান করুন।
  • 'অধিকতর অনুসন্ধান' অপশনে ক্লিক করুন।
  • আপনার প্রদত্ত তথ্য সার্ভারের তথ্যের সঙ্গে মিলে গেলে আপনি আর এস খতিয়ানের তথ্য দেখতে পাবেন।
  • নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে সার্টিফাইড খতিয়ান ডাউনলোড করুন।
  • যদি অনলাইনে আপনার খতিয়ানের তথ্য না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে স্থানীয় ভূমি অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান সম্পন্ন করতে হবে।

খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান

খতিয়ান ও দাগের তথ্য যাচাই করার নির্দেশনা:

ePorcha.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন:
  • ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর কাঙ্ক্ষিত জমির বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং মৌজা নির্বাচন করুন।  
  • এরপর মৌজা ও খতিয়ান ধরন নির্বাচন করে খতিয়ান নম্বর লিখুন এবং খুঁজুন বাটনে ক্লিক করুন 
দাগ নম্বর বা মালিকের নাম দিয়ে অনুসন্ধান করুন:
  • অধিকতর অনুসন্ধান করতে "অধিকতর অনুসন্ধান" বাটনে ক্লিক করুন।  
  • দাগ নম্বর বা মালিকের নাম লিখে "খুঁজুন" বাটনে ক্লিক করুন।  

খতিয়ানের কপি সংগ্রহ: খুব সহজেই মাত্র ১ মিনিটে জমির দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বরের তথ্য বের করতে পারবেন।  
  • এছাড়াও খতিয়ানের কপি সংগ্রহের জন্য আবেদন করতে পারবেন।  
  • আবেদন করতে ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর প্রয়োজন হবে।  
  • ভোটার আইডি কার্ড চেকের মাধ্যমে আপনার এনআইডি নম্বর ও নিশ্চিত করতে পারবেন।  
এভাবে সহজেই জমির খতিয়ান ও দাগের সঠিক তথ্য যাচাই এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা সম্ভব।

খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান

খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান প্রক্রিয়া:
জমির খতিয়ান ও দাগের সঠিক তথ্য জানতে এবং অনলাইনে পর্চা সংগ্রহ করতে ePorcha.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজেই অনুসন্ধান করা যায়। নিচে ধাপে ধাপে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো:

১. ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন:
  • প্রথমে ePorcha.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
২. জমির তথ্য নির্বাচন করুন:
  • বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং মৌজা নির্বাচন করুন।
  • খতিয়ান ধরন (CS, SA, RS, বা BS) নির্বাচন করুন।
৩. খতিয়ান নম্বর অনুসন্ধান:
  • নির্ধারিত ঘরে খতিয়ান নম্বর লিখুন।
  • এরপর "খুঁজুন" বাটনে ক্লিক করুন।
৪. দাগ নম্বর বা মালিকের নাম অনুসন্ধান (অধিকতর অনুসন্ধান):
  • "অধিকতর অনুসন্ধান" অপশনে ক্লিক করুন।
  • সেখানে দাগ নম্বর বা মালিকের নাম লিখে "খুঁজুন" বাটনে ক্লিক করুন।
৫. বিস্তারিত তথ্য প্রদর্শন:
  • অনুসন্ধানের পর "বিস্তারিত" অপশনে ক্লিক করুন।
  • এখানে জমির মালিকানা, দাগের বিবরণ এবং অন্যান্য তথ্য দেখা যাবে।
৬. খতিয়ানের কপি সংগ্রহ:
  • খতিয়ানের কপি সংগ্রহের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
  • আবেদন করতে ভোটার আইডি নম্বর প্রয়োজন হবে।
🔑 টিপস:
  • অনুসন্ধানের সময় সঠিক তথ্য দিন।
  • জমির দাগ নম্বর এবং খতিয়ান নম্বরের তথ্য আগে থেকে প্রস্তুত রাখুন।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করে খুব সহজেই ঘরে বসে অনলাইনে খতিয়ান ও পর্চার তথ্য যাচাই এবং সংগ্রহ করা যাবে।

জমির খতিয়ান অনুসন্ধান

অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে খতিয়ানের কপি সংগ্রহ করার সুবিধা চালু করা হয়েছে, যা একটি অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় এই নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়িত হয়েছে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘দেশে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া প্রায় ৬১ হাজার ৫০০ মৌজা রয়েছে। 

এর মধ্যে ৪১ হাজার মৌজার জরিপ সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রায় ৩২ হাজার মৌজার জরিপ থেকে প্রস্তুত এক কোটি ৪৬ লাখ আরএস (১৯৬৫ সাল থেকে চলমান জরিপের ভিত্তিতে প্রস্তুত) খতিয়ানের তথ্য অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। আমরা এখানেই থেমে থাকব না; অবশিষ্ট খতিয়ানগুলো পর্যায়ক্রমে অনলাইনে যুক্ত হবে। তিনি আরও বলেন, জরিপ কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সম্পন্ন হওয়া খতিয়ানগুলো ধাপে ধাপে আপলোড করা হবে। 
জরিপ কার্যক্রম শেষে গেজেটভুক্ত চূড়ান্ত খতিয়ানও অনলাইনে যুক্ত করা হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে খতিয়ানের কপি পেতে জটিলতা ও সময়ক্ষেপণ ছিল। তবে নতুন এই ব্যবস্থায় তা দূর হবে। খতিয়ানের কপি সংগ্রহের জন্য ভূমি অফিস বা ডিসি অফিসে দৌড়াতে হবে না,’ উল্লেখ করেন ভূমিমন্ত্রী।

খতিয়ান অনুসন্ধান বি এস 

১. বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) কী?
বিএস বা বাংলাদেশ সার্ভে হলো বাংলাদেশের ভূমি জরিপের একটি আধুনিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ভূমির মালিকানা, পরিমাপ এবং খতিয়ানের সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও নথিভুক্ত করা হয়। পাকিস্তান আমলের আরএস (রিভিশনাল সার্ভে) এর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভূমি জরিপের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বিএস জরিপ চালু হয়।

২. বিএস পদ্ধতির মূল লক্ষ্য:
  • ভূমির সঠিক পরিমাপ ও চিহ্নিতকরণ।
  • মালিকানা সম্পর্কিত বিরোধ নিরসনে সহায়তা।
  • আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খতিয়ানের নির্ভুলতা নিশ্চিত করা।
  • ভূমির তথ্য ডিজিটালাইজেশন এবং সহজে অনলাইনে অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা।
৩. বিএস জরিপের প্রক্রিয়া:
  • প্রাথমিক জরিপ: ভূমির সীমানা নির্ধারণ এবং মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
  • মৌজা ম্যাপ তৈরি: প্রতিটি মৌজার একটি ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়।
  • খতিয়ান প্রস্তুতি: ভূমির মালিকানা, দখলদারিত্ব, খাজনা ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়।
  • ড্রাফট খতিয়ান প্রকাশ: প্রাথমিক খতিয়ান প্রকাশিত হয় এবং আপত্তি গ্রহণ করা হয়।
  • চূড়ান্ত খতিয়ান প্রকাশ: আপত্তি নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত খতিয়ান প্রকাশ করা হয়।
৪. বিএস খতিয়ান অনুসন্ধান পদ্ধতি:
বর্তমানে বিএস খতিয়ানের তথ্য অনলাইনে সহজেই অনুসন্ধান করা যায়।
  • অনলাইনে অনুসন্ধান: ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনলাইন পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে বিএস খতিয়ান অনুসন্ধান করা যায়।
  • প্রয়োজনীয় তথ্য:
  1. মৌজার নাম
  2. খতিয়ান নম্বর
  3. দাগ নম্বর
  4. ভূমির মালিকের নাম
৫. বিএস পদ্ধতির সুবিধা:
  • ভূমি মালিকানা সংক্রান্ত স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।
  • ভূমি বিরোধ কমে আসে।
  • ভূমির তথ্য ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দ্রুত অনুসন্ধান করা যায়।
  • ভূমি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমার পরিমাণ হ্রাস পায়।
৬. চ্যালেঞ্জ:
  • জরিপ চলাকালীন তথ্যগত ভুল।
  • স্থানীয় বিরোধ ও অসহযোগিতা।
  • পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর অভাব।
বিএস পদ্ধতি বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি ভূমি মালিকদের সুরক্ষা প্রদান করে এবং ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা ও জালিয়াতি হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখে। অনলাইন অনুসন্ধান ব্যবস্থার মাধ্যমে খতিয়ানের তথ্য এখন আরও সহজলভ্য, স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্য হয়েছে।

খতিয়ান অনুসন্ধান নিয়ে সর্বশেষ তথ্য

প্রিয় পাঠক মন্ডলী আশা করছি আমাদের আজকের এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনারা জানতে পারবেন খতিয়ান অনুসন্ধান কিভাবে করবেন এবং বর্তমানে খুব দ্রুত তার সাথে কিভাবে খতিয়ান অনুসন্ধান করবেন এবং কিভাবে সেটি সঠিক তথ্য যাচাই করবেন এ সকল বিষয়ে সম্পর্কে। সুতরাং সব মিলিয়ে আমাদের আজকের এই সম্পূর্ণ পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্টে জানিয়ে দিবেন। এবং এই পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে দিবেন যেন আপনারা পরে উপকৃত হতে পারে, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগার জাফর সাহেবের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url